বহুমুখী
চতুর্থ সংখ্যা
শারদীয়া - ১৪২৩
প্রচ্ছদ পরিচয়
সুমন দাস ও অঙ্কিতা
‘বহুমুখী’র এবারের প্রচ্ছদ দশমহাবিদ্যাকে উৎসর্গীকৃত। এখানে মহামাতৃকাশক্তিকে বহুমুখীরূপে কল্পনা করা হয়েছে। এক নৃত্যপরায়ণা নারীদেহের উপরে দশটি শক্তিস্বরূপা তৃতীয় নয়ন আর মুখমন্ডল কল্পনা করা হয়েছে। শাক্তদের মতে, সংস্কৃত শব্দ ‘মহাবিদ্যা’-র অর্থ মহৎ প্রকাশ। রূপের প্রকাশ, জ্ঞানের প্রকাশ, ভক্তির প্রকাশ। আর এই প্রকাশ বিশ্বজননীর দশটি রূপের মধ্যে দিয়ে। ‘মহাবিদ্যা’ বা ‘দশমহাবিদ্যা’ হিন্দুধর্মে দেবী অর্থাৎ দিব্য জননীর দশটি বিশেষ রূপের সমষ্টিগত নাম। দেবীত্বের এই ক্রমবিন্যাসের একদিকে যেমন রয়েছেন ভয়ংকর দেবীমূর্তি, তেমনই অন্য প্রান্তে রয়েছেন এক অপরূপ সুন্দরী দেবীপ্রতিমা।
মুণ্ডমালা তন্ত্রানুসারে দশমহাবিদ্যা হলেনঃ
কালীঃ সর্বসংহারকারিনী, জন্ম ও শক্তির দেবী। কালীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী। (তিনি কালো রূপের অধিকারিণী।)
তারাঃ পথপ্রদর্শক ও রক্ষাকারিনী (তারিনী) দেবী। বিশ্বের উৎস হিরণ্যগর্ভের শক্তি এবং মহাশূন্যের প্রতীক। (আমার মতে এই মুখমন্ডলের রঙ হওয়া উচিত ছিল শ্যামবর্ণ মানে চলিত মতানুসারে নীল তবে অনেকক্ষেত্রে দেবী তারা কৃষ্ণবর্ণা।)
ত্রিপুরসুন্দরী বা ললিতা-ত্রিপুরসুন্দরীঃ (ষোড়শী) পূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতার স্বরূপ। শ্রীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী। তান্ত্রিক পার্বতী নামে পরিচিতা। (এই দেবী পূর্ণতা আর পূর্ণাঙ্গতার প্রতিভূ বলেই আলাদা করে কোন মুখমন্ডল নয়, বরং সর্বঅঙ্গে বিরাজমান তা বোঝাতেই নারীদেহের হৃদয়ে অবস্থিত।)
ভুবনেশ্বরীঃ বিশ্বজননী। পার্থিব জগতের শক্তিসমূহের প্রতীক। (আমার মতে এই দেবীর মুখমণ্ডলের রঙ হওয়ার দরকার ছিল গোলাপী আভা যুক্ত। তবে কমলা রঙও শক্তির প্রতীকরূপে বিবেচিত হয়।)
ভৈরবীঃ ভয়ংকরী দেবী। সেই কামনা ও প্রলোভনের স্বরূপ যা মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। (এই দেবীর মুখমন্ডলের রঙ রাখা হয়েছে লাল।)
ছিন্নমস্তাঃ উলঙ্গিনী দেবীমূর্তি। তিনি স্বহস্তে নিজ মস্তক ছিন্ন করে নিজ রক্ত নিজেই পান করেন। চক্রপথে আত্মধ্বংস ও আত্মপুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে সৃষ্ট জগতের অবিরাম বিদ্যমানতার শক্তির প্রতীক। (দেবী ছিন্নমস্তা হওয়ার কারনে তার কোন মুখমন্ডল নেই। কিন্তু তার শক্তি বিরাজমান বলে তাঁর তৃতীয় নয়নকে শক্তি প্রতিভূরূপে ছবির মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে।)
ধূমাবতীঃ বিধবা দেবীমূর্তি। অগ্নির দ্বারা জগৎ ধ্বংসের পর ভষ্মরাশির মধ্য থেকে যে ধূম নির্গত হয়, তার স্বরূপ। তিনি কখনও কখনও অলক্ষ্মী বা জ্যেষ্ঠাদেবী নামেও অভিহিতা হন। (এই দেবী নায্যকারণেই ধূসরবর্ণা)
বগলামুখীঃ শত্রুনিষ্ক্রিয়কারিনী দেবী। ঈর্ষা, ঘৃণা ও নিষ্ঠুরতার মতো মানবচরিত্রের অন্ধকার দিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁকে সারস-মুণ্ড রূপেও কল্পনা করা হয়। (এই দেবী পীতবর্না। আমার মতে এই দেবীর মুখমন্ডল হলুদ কিন্তু ছবিতে কিঞ্চিৎ ভুলবশতঃ তিনি কমলারঙে বিরাজমান।)
মাতঙ্গীঃ কর্তৃত্ব শক্তির দেবী। জাতিহীন দেবী (কালীকুল সম্প্রদায়ে), ললিতার প্রধানমন্ত্রী (শ্রীকুল সম্প্রদায়ে); তান্ত্রিক সরস্বতী। (এই দেবী শ্যামবর্ণা, কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী শ্যামবর্ন দুই প্রকারের, তারমধ্যে একটি হল দূর্বাদলশ্যাম। এখানে দেবী দূর্বাদলশ্যাম তাই তিনি সবুজবর্ণা।)
কমলাকামিনীঃ বরাভয় প্রদায়িনী শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী। ভাগ্যদেবী লক্ষ্মীর অন্যরূপ। তান্ত্রিক লক্ষ্মী নামেও অভিহিতা। (ইনি কাঁচা সোনার মত রঙবিশিষ্টা,এখানে এনাকে সঙ্গত কারণেই কমলা রঙ্গেই রাঙ্গানো হয়েছে।)
আজ দেবীর আরাধনায় বসে ‘বহুমুখী’ ভেবেছে দেবীর এই প্রজ্জ্বলিত দশরূপ। অলংকারে দশমহাদেবী একদেহী, কারণ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই দেবীর এই দশরূপের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এই ছবিতে দেবী অগ্নি আসনা। মানুষের মনের ভিতরে এই দশটি রূপ মশালের উগ্রতার মতই দপ করে জ্বলে উঠুক,একত্রে। মুছে যাক মনের কালিমা, বিকলতা, অন্ধকার। প্রকাশিত হোক জ্ঞান, প্রেম ও করুণা। হৃদয়ে জাগরিত হোক মাতৃচেতনার বোধ। বহুমুখী’র সমস্ত কাজ দেবীর আশীর্বাদে শুরু হোক, দেবীর পদতলে অঞ্জলীরূপে শেষ হোক। মানুষের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী থাকুক সদাজাগ্রত। জ্ঞানের দেবী, জগন্মাতা আপন ক্ষেত্র বিস্তৃত করুক বহুমুখীর প্রতি বিভাগে। দিনে দিনে বর্ধিত হোক তার সম্পদ, যা মানুষের জ্ঞানবৃদ্ধির কাজে সহায়করূপে সুপ্রতিষ্ঠিত।
Cover Page
Content Pages
nformation
Date - Pujabarshiki 1423
Year - 4
Year - 4
Pages - 409
PDF Size - 41.4 MB
PDF Size - 41.4 MB
Webzine
No comments:
Post a Comment
Please encourage if you like our posts.